স্কুলের সামনে নেই স্পিড ব্রেকার, বাসচাপায় ঝরে গেল রশনির প্রাণ
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৭-০৫-২০২৫ ১২:৫৮:১৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৭-০৫-২০২৫ ০১:১৬:৪৫ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
আর কখনও বান্ধবীর মতো গল্প করা হবে না দাদির সঙ্গে। কিংবা হাঁটা হবে না আঙুল ছুঁয়েও। বেপরোয়া গতির একটি বিআরটিসি বাস নিস্তব্ধ করে দিয়েছে সবকিছু। রশনি পালের (৭) পরিবারে এখন কেবলই কান্নার রোল। সোমবার (২৬ মে) সকালে রাজধানীর কমলাপুর মোড়ে মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় প্রথম শ্রেণির এই শিক্ষার্থীর।
জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিদিনের মতো দাদি রেখা বিশ্বাসের হাত ধরে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিল রশনি। এ সময় দাদির সঙ্গে সে নানান বিষয়ে গল্প করছিল। রাস্তা পার হওয়ার সময় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিআরটিসির বাস এসে রশনিকে ধাক্কা দেয়। এতে সে সড়কে ছিটকে পড়ে ছটফট করতে থাকে। পরে তাকে রিকশায় উঠিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।এদিকে, মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান গুলশানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চৈত্রী বিশ্বাস। সেখানে গিয়ে আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, তোর (রশনি) অসুস্থতার জন্য ভারতে চিকিৎসা করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আর তুই চিকিৎসা না নিয়েই আমার বুকটা খালি করে চলে গেলি! এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব?রশনির বাবার নাম পলাশ পাল। তিনি বিদেশে থাকেন। মেয়ের চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি দেশে এসেছেন। কলিজার টুকরা একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে তিনিও পাগলপ্রায়।বিলাপ করছিলেন দাদি রেখা বিশ্বাসও। বারবার বলছিলেন, আসা-যাওয়ার পথে দু’জনের কত কথা হতো! এখন আমি কাকে স্কুলে নিয়ে যাব? কাকে গল্প শোনাব?
মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণিতে পড়তো রশনি। তার শ্রেণিশিক্ষক সালমা আক্তার বলেন, এ বছর মর্নিং শিফটে গোলাপ শাখায় প্রথম শ্রেণিতে নতুন ভর্তি হয় রশনি। তার দাদি প্রায়ই বলতেন, রশনি ঠিকমতো খায় না। শারীরিকভাবে দুর্বল। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাবেন। কিন্তু তার আগেই মেয়েটি চলে গেল!বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চৌধুরী এমদাদুল করিম আক্ষেপ করে বলেন, স্কুলের আশপাশে এত বাসের ডিপো! হাঁটা-চলা করা যায় না। অনেকবার স্কুলের সামনে স্পিড ব্রেকার ও ট্রাফিক পুলিশ দেওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু কাজ হয়নি। তিনি আরও বলেন, রশনির মৃত্যুতে মতিঝিল মডেল পরিবার শোকাহত।
ঘটনাস্থল এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পরিদর্শক মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাস্তায় গাড়ির চাপ অনেক কম ছিল। ট্রাফিক বক্সের মধ্যে বসে বিভিন্ন পয়েন্টের ট্রাফিক ব্যবস্থার খোঁজখবর নিচ্ছিলাম। এ সময় বাইরে চিৎকার শুনে বক্স থেকে বেরিয়ে দেখি একটি শিশু রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আর বিআরটিসির একটি বাস দ্রুতগতিতে রাজারবাগের দিকে ছুটছে। তিনি আরও বলেন, সঙ্গে সঙ্গে সার্জেন্ট ইমাম উদ্দিন পিছু নিয়ে চালকসহ বাসটি আটক করে। পরে চালক শাহজাহানকে মতিঝিল থানায় হস্তান্তর করা হয়।এ বিষয়ে মতিঝিল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন বলেন, নিহত শিশুর বাবা সড়ক দুর্ঘটনা আইনে মামলা করেছেন। এ মামলায় বাসচালককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।প্রসঙ্গত, নিহত রশনি মা ও দাদির সঙ্গে মুগদার মান্ডা এলাকায় থাকত। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টংগীবাড়ি উপজেলার পাটগাঁও গ্রামে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স